প্রকাশিত: ০১/০৬/২০১৮ ৯:৫৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:১৫ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর সঙ্গে চুক্তি করতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দেশটির সরকারের সঙ্গে দুই সংস্থার মতৈক্য হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

বিবৃতিতে বলা হয়, যেহেতু পরিস্থিতি এখনও রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফেরার জন্য সহায়ক নয়, তাই ওই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সরকারের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে এই সমঝোতা স্বারক হলো প্রথম ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

এর আগে গত এপ্রিলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাটি। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার দেড় মাসের মাথায় মিয়ানমারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় এই সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে।

মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে বসবাসকরী রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। আশির দশক থেকেই নানা সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান চালিয়েছে তারা। আর রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে ছুটে এসেছে বাংলাদেশে।

গত আগস্টের সেনা অভিযানের পর শুরু হয় সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ। সব মিলিয়ে এখন কক্সাবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে আছে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।

নির্যাতিত এই মানুষদের জন্য উদ্বিগ্ন প্রায় গোটা বিশ্ব। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো চাপ দিচ্ছে মিয়ানমারকে। বাংলাদেশ বিষয়টি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে আলোচনা।

মিয়ানমার তার মানুষদের ফিরিয়ে নেবে, এমন কথা দিয়ে সই হয়েছে একটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি চুক্তি। কিন্তু টালবাহানার শেষ নেই দেশটির। ২০ জানুয়ারি যে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা নিজেরাই জানিয়েছিল গণমাধ্যমে, সাড়ে চার মাস পরও সেটি শুরু করছে না মিয়ানমার। কবে শুরু হবে তারও কোনো ইয়ত্তা নেই।

এর মধ্যে ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে চুক্তির এই প্রক্রিয়া এগিয়ে যাওয়াকে বড় অগ্রগতি হিসেবেই দেখা হচ্ছে। সংস্থাটির সহকারী হাই কমিশনার জর্জ ওকোথ-ওব্বো বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার অধিকার রয়েছে। তাদের অধিকার রক্ষা ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ওপর আমরা জোর দিয়েছি। মিয়ানমার সরকার এ বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে।’

মিয়ানমারের আগে ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তিতে সই করেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাটির হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি।

চু্ক্তি সই হওয়ার পর এ বিষয়ে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেছিলেন, ‘চুক্তি অনুসারে ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আয়োজন করবে। মিয়ানমারে নির্মম নিপীড়নের শিকার এই জনগোষ্ঠীর সদস্যরা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে সম্মত কি না, সেই মতামত নেবে, বিশ্রাম-শিবিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবহনসহ অন্যান্য বিষয় দেখভাল করবে।’

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের আগে ইউএনএইচসিআর তাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা, সহায়তা ও তহবিল সংগ্রহের ব্যবস্থা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে দুটি বিশ্রাম-শিবিরের ব্যবস্থা করা হবে। রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের আগে সেখানে রোহিঙ্গারা স্বল্প সময়ের জন্য অবস্থান করতে পারবেন।

এর আগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে গত নভেম্বরে চুক্তি সই করে মিয়ানমার। চুক্তি অনুযায়ী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরৎ নিতে চায় মিয়ানমার। এছাড়া চুক্তির আলোকে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়া শুরু করার কথা থাকলেও ছয় মাস পার হলেও সে প্রক্রিয়া এখনও শুরু করেনি মিয়ানমার।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু না করে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সহযোগিতা করছে না বলে উল্টো অভিযোগ করে মিয়ানমার। এরপর বিভিন্নভাবে এ বিষয়ে কালক্ষেপণ করছে তারা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কাজ করবে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা। বাংলাদেশ-মিয়ানমার এর মধ্যে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করবে জাতিসংঘের এ সংস্থাটি।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিভাগ এবং ইউএসএআইডিয়ের মাধ্যমে কক্সবাজার, ভাসানচর এ অঞ্চলের ...